শ্রীমান পৃথ্বীরাজ ' ছবির শুটিং-এ স্ক্রিপ্টে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে মহুয়া ও অয়ন
মহুয়া রায়চৌধুরী সম্পর্কে ভুয়ো খবর সীমাহীন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট শুধু মহুয়ার স্বামী এবং বাবার কথা বলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে মহুয়া ছিল সবার ছোট। মহুয়ার বড় বোন শান্তা আর বড় ভাই পিনাকী। মহুয়ার মা পিএন্ডটি ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন। দমদমে তারা টেলিফোন বিভাগের কোয়ার্টারে থাকতেন যেখানে গুজব রটে যে মহুয়ার মা একটি বস্তিতে থাকতেন। এরকম অনেক বাজে গুজব আছে যা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
এই সেই দমদমের টেলিফোন কোয়ার্টার যেখানে মহুয়া রায়চৌধুরীর বড় হয়ে ওঠা। সময়ের সাথে সাথে অনেকটাই জীর্ণতাপ্রাপ্ত। টেলিফোন কোয়ার্টারে থাকতে হলে পরিবারের কাউকে টেলিফোনে চাকরি করতে হয়। সেটা ওনার মা করতেন। এই পেজে একাধিক ব্যক্তি যাঁরা ওনার শিপ্রা থেকে সোনালী হয়ে মহুয়া হওয়ার সাক্ষী তাঁরা এই কোয়ার্টারের কথা উল্লেখ করেছেন।
মহুয়া রায়চৌধুরীকে তাঁর দমদমে থাকার দিনগুলোতে খুব ভালো করে চিনতেন এমন একজন শ্রী কমল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, " শিপ্রাদের ঠিক নীচের কোয়ার্টারে আমার আর এক পরিচিত ভদ্রলোক থাকতেন , পুরো নামটা এখন মনে পড়ছে না, পদবী ছিল মৈত্র ।সেই ভদ্রলোকের ছেলের ডাকনাম
দম্পতি (1976) |
জনৈকা কেয়া চক্রবর্তী মহুয়ার প্রতিবেশী ছিলেন এবং তার বক্তব্য
মহুয়ার সঙ্গে একই কলোনিতে থাকতেন কেয়া চক্রবর্তী। ১৯৭২ সালে কেয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই টেলিফোন কলোনিতে আসেন আর কয়েক মাস পরেই মুক্তি পায় শ্রীমান পৃথীরাজ। কেয়া মহুয়ার কাছে পরিচিত ছিল এবং সে কেয়ার কাছে সেলিব্রেটি ছিল না। উপরের ফটোগ্রাফে 'বি' বিল্ডিংয়ের গেট এবং মহুয়া 'এ' বিল্ডিংয়ে থাকতেন যা 'বি' বিল্ডিংয়ের ঠিক পাশে ছিল। ক্লাইভ হাউস স্টপ - পি এবং টি কোয়ার্টার।
কেয়া আরও বলেন, ইন্টারনেটে অনেক খবর রয়েছে যে মহুয়া একটি নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্য, যা সম্পূর্ণ ভুয়া। মহুয়ার মা টেলিফোন বিভাগে কাজ করতেন।
ছবিতে দেখানো ভবনের পাশের একটি ভবনের ১ম তলায় থাকতেন কেয়া চক্রবর্তী। নিচতলার ফ্ল্যাট খালি ছিল আর মহুয়ার বিয়ের আগের জন্মদিনের সেলিব্রেশন করা হয়েছিল সেই ফ্ল্যাটে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেত্রী ছায়া দেবী, অভিনেতা দিলীপ রায়। মহুয়া ছায়া দেবীকে মা বলে ডাকতো'
মহুয়ার দম দম প্রতিবেশী কেয়া চক্রবর্তী আরও জানান '57 টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এর লাগোয়া পি অ্যান্ড কোয়ার্টারস এ বসবাস করতাম।মহুয়ার দাদার নাম ছিল পিনাকি আর দিদির নাম শান্তা। আমরা ওই কমপ্লেক্স এ যাই 1972 এ। খুব ছোটো থেকে সেখানে তাই খুব সাধারণ জীবনধারা ছিল এবং সেখানে তার কোন সেলিব্রিটি ইমেজ দেখিনি।'
মহুয়ার একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য (জনৈক ধ্রুবেশ্বর রায় - Dhrubeswar Roy)
সালটা ১৯৭০ হবে খুব সম্ভবত ; একটা কোচিং সেন্টারে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী হিসেবে পড়তে আসে দমদমের নাগের বাজারে । তাকে পড়াতে গিয়ে সামনে থেকেই দেখেছিলাম। এতই সুন্দর ছিল যে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না ! তখন অভিনয় জগতে এসে গেছে , কিন্তু প্রচার বা ছবির পর্দায় আসে নি বলে জানতাম না ।কিন্তু সেই বৎসরেই ' উল্টোরথ ' প্রচারে আনে। ওর ক্লাসে আসারও ছেদ পড়ে । তিলকের সাথে ওই নাগের বাজারেই ঘর বেঁধেছিল।
মতিঝিল কলেজের পাশেই কিশোর ভারতী ইস্কুল ছিল , সেই খানেই ছিল কোচিং । আমি ছিলাম ওই কলেজের ফাইনাল ইয়ারের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র । ইস্কুলের ব্যবস্থা করা বাসায় শিক্ষকের সাথে প্রথম সারির ছাত্র ছাত্রীর দূরত্ব সামান্যই ! আমার বয়স যাই হোক,শিক্ষক তো ! সামনে নক্ষত্ররা যতই থাকুক , পূর্ণিমার চাঁদ তো চোখ ধাঁধিয়ে দেবেই। তাই আলোর পরশ বুলিয়ে নেওয়া এত দিন বাদে । এই সুন্দর সৃষ্টি যেন স্রষ্ঠা লাখে একটাই হঠাৎ করে ফেলেন , আর সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে আমি অক্ষম।
জনৈক শ্রী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন : " বর্তমানে আমি দমদমের এক বরিষ্ঠ নাগরিক ও পুরাতন বাসিন্দা। পি এন্ড টি কোয়ার্টারের বাসিন্দা সোনালী, থুরি মহুয়া, এবং আমার বন্ধু কমল রায়। ফলে যাতায়াত এবং বন্ধুত্ব ছিল। মহুয়ার নৃত্যপটিয়সী শিল্পী জীবন তৈরী হচ্ছে তখন। মতিঝিল স্কুলে বার্ষিক গরমের ছুটি পড়ার আগের দিন ফাংশন হতো। সেই অনুষ্ঠানে আমি ও আমার সহপাঠী কমল অনেক অনুনয় বিনয় করে সোনালীকে পারফরম্যান্স করিয়েছিলাম। আজও স্মৃতি হয়ে আছে সেসব। পরবর্তীতে ' শ্রীমান পৃথ্বীরাজ ' রিলিজ হয়েছিল। সেসময়কার আমার বন্ধু ও সহপাঠী কমল রায় দমদমের এক নামী স্কুল কে কে হিন্দু র ছাত্র ছিলাম। পড়াশোনা ও ফুটবলে আমরা দুজনেই স্কুলকে নেতৃত্ব দিই। কমল রায় ছিল পি এ্যান্ড টি কোয়ার্টারের বাসিন্দা। ফলে আমাদের সাথে মহুয়ার ও তাঁর ভাই পিনাকী এবং বাবার ঘনিষ্ঠতা ছিল। সিনেমার জন্য তার সোনালী নাম পরিবর্তন করে মহুয়া রাখেন 'শ্রীমান পৃথ্বীরাজ' এর পরিচালক। স্কুলে অ্যানুয়াল ফাংশনে একবার এসে নৃত্য পরিবেশন করে। শর্ত ছিল, সোনালী নয় মহুয়া নাম ঘোষণা করতে হবে। আমরা তাই ই করি। বহুবছর পর সরকারি কর্মসূত্রে আমি বিভিন্ন রাজ্যে বদলী হবার ফলে যোগাযোগ ছিল না। তাছাড়া বাংলা সিনেমাতে সে তখন আইকন নায়িকা। দীর্ঘ দিন পরে দমদমের আমার পাশের পাড়াতে বিবাহিত জীবন যাপন করেছেন। এর পরে তিনি আবার সাউথ কলকাতায় ফ্ল্যাটে চলে যান। এর পর, একদিন হঠাৎ তাঁর মৃত্যু সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি।
জনৈকা শিপ্রা দাস জানিয়েছেন মানুষ মহুয়া রায়চৌধুরীর কিছু অজানা কথা :
মহুয়া কে খুব কাছ থেকে দেখেছি।ছোটবেলায় একসাথে খেলেছি।ওর দিদির বিয়ের সময় খুব আনন্দ করেছি। ওর দিদি শান্তা বৌদি আমাদের পাড়ার বৌ। ঠিক আমাদের পাশের বাড়িটা ছিল ওদের বেহালাতে । ও আমার বান্ধবী ছিল ।খুব মজা করতো দুষ্টু মিষ্টি নায়িকা। বেঁচে থাকলে মহানায়িকার স্থান দখল করতো।
জনৈক বদরুদ্দোজা ডোমকল: 'একটা ছবি তুলে রাখতে পারিনি বলে স্মৃতিচারণ করতে খুব কষ্ট হয়। ১৯৭০ সালের পর থেকে আমি কলকাতায় আমার খালাম্মার বাসায় গিয়ে মাঝেমধ্যে। সরজিনী নাইডু গার্লস কলেজের কাছে পি. & টি. স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন আমার খালাম্মাদের পরিবার। খালুজীর অফিসেই চাকরি করতেন মহুয়া রায়চৌধুরী। প্রায়ই দেখতাম-রান্নাঘরে বসে মহুয়া রায়চৌধুরী গল্প করছেন আমার খালাম্মার সাথে। আমার খালুজী না ফেরার দেশে চলে গেছেন মাস তিনেক আগে। খালাম্মা এখন আছেন বড় ছেলের কাছে দিল্লিতে। অনেক তথ্য নেওয়া যেতে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন